বেলজিয়াম কাজের ভিসা ও বেতন সম্পর্কে জেনে নিন

বেলজিয়ামে কাজ করার জন্য সঠিক কাজের ভিসা পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি বেলজিয়ামে একটি চাকরির সুযোগ পেতে চান, তাহলে এই নিবন্ধটি আপনাকে সঠিক নির্দেশনা দেবে। এখানে বেলজিয়ামের কাজের ভিসার ধরণ, আবেদন প্রক্রিয়া, এবং প্রয়োজনীয় নথি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

বেলজিয়াম কাজের ভিসার ধরণ

বেলজিয়ামে বিভিন্ন ধরনের কাজের ভিসা রয়েছে, যেগুলো আপনার কর্মসংস্থানের ধরন এবং মেয়াদের উপর নির্ভর করে প্রযোজ্য হবে। কিছু সাধারণ কাজের ভিসার মধ্যে রয়েছে:

  1. সিঙ্গেল পারমিট (Single Permit): এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরনের কাজের ভিসা। এটি আপনাকে বেলজিয়ামে বসবাস এবং কাজ করার অনুমতি দেয়। সাধারণত, আপনার নিয়োগকর্তা আপনার পক্ষ থেকে এই পারমিটের আবেদন করবেন।

  2. ইইউ ব্লু কার্ড (EU Blue Card): এটি উচ্চ দক্ষ বিদেশী কর্মীদের জন্য একটি বিশেষ ধরনের কাজের ভিসা। এর জন্য আপনার উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং বেলজিয়ামের কোনো কোম্পানি থেকে একটি উচ্চ বেতনের চাকরির প্রস্তাব থাকতে হবে।

  3. টাইপ বি ওয়ার্ক পারমিট (Type B Work Permit): এটি স্বল্পমেয়াদী কাজের জন্য, যেমন ৯০ দিনের কম সময়ের জন্য কাজের জন্য প্রযোজ্য। সাধারণত, এর জন্য আপনার নিয়োগকর্তার একটি ঘোষণাপত্র এবং আপনার কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

  4. টাইপ সি ওয়ার্ক পারমিট (Type C Work Permit): এই পারমিট বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেমন সীমান্ত কর্মী, শিক্ষার্থী, গবেষক, ইত্যাদি।

  5. অন্যান্য ধরনের ওয়ার্ক পারমিট: উপরন্তু, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য অন্যান্য ধরনের ওয়ার্ক পারমিট রয়েছে, যেমন ইন্টার্নশিপ ভিসা, স্ব-কর্মসংস্থান ভিসা, ইত্যাদি।

বেলজিয়াম কাজের ভিসার জন্য যোগ্যতা

বেলজিয়ামে কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হবে। এই যোগ্যতাগুলো নিশ্চিত করে যে আপনি বেলজিয়ামের শ্রম বাজারে অবদান রাখতে সক্ষম এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারবেন।

সাধারণ যোগ্যতা:

  • বেলজিয়ামের বাইরের নাগরিক: যদি আপনি বেলজিয়ামের নাগরিক না হন তবে আপনাকে অবশ্যই কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU), ইউরোপীয় অর্থনৈতিক এলাকা (EEA) বা সুইজারল্যান্ডের নাগরিকদের সাধারণত বেলজিয়ামে কাজ করার জন্য ভিসার প্রয়োজন হয় না।
  • বেলজিয়ামের কোনো কোম্পানি থেকে চাকরির প্রস্তাব: আপনার অবশ্যই বেলজিয়ামের কোনো নিয়োগকর্তার কাছ থেকে একটি বৈধ চাকরির প্রস্তাব থাকতে হবে। এই প্রস্তাবপত্রে আপনার চাকরির বিবরণ, বেতন এবং অন্যান্য শর্তাবলী উল্লেখ থাকতে হবে।
  • যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা: আপনার চাকরির প্রস্তাবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পূর্ববর্তী কর্ম অভিজ্ঞতার প্রমাণ আপনাকে জমা দিতে হবে।

বিশেষ যোগ্যতা (নির্দিষ্ট ভিসার জন্য):

  • ইইউ ব্লু কার্ড: এই ভিসার জন্য আপনার উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা (সাধারণত স্নাতকোত্তর বা সমমান) এবং বেলজিয়ামের কোনো কোম্পানি থেকে একটি উচ্চ বেতনের চাকরির প্রস্তাব থাকতে হবে।

  • টাইপ বি ওয়ার্ক পারমিট: এই ভিসার জন্য আপনার নিয়োগকর্তাকে একটি ঘোষণাপত্র জমা দিতে হবে এবং আপনাকে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদান করতে হবে। এই ভিসা সাধারণত স্বল্পমেয়াদী বা মৌসুমি কাজের জন্য প্রযোজ্য।

  • অন্যান্য: কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন ইন্টার্নশিপ বা স্ব-কর্মসংস্থানের জন্য, অতিরিক্ত যোগ্যতা প্রযোজ্য হতে পারে।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • পর্যাপ্ত আর্থিক স্বচ্ছলতা: আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনি বেলজিয়ামে আপনার থাকার সময় নিজেকে আর্থিকভাবে সমর্থন করতে সক্ষম।
  • স্বাস্থ্য বীমা: আপনার অবশ্যই বৈধ স্বাস্থ্য বীমা থাকতে হবে যা বেলজিয়ামে আপনার চিকিৎসার খরচ কভার করবে।
  • অপরাধমুক্ত থাকার প্রমাণ: আপনাকে আপনার নিজ দেশ থেকে একটি অপরাধমুক্ত থাকার প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।

বেলজিয়াম কাজের ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া

বেলজিয়াম কাজের ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল হতে পারে এবং এটি আপনার কর্মসংস্থানের ধরন এবং ভিসার ধরনের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে, সাধারণভাবে, প্রক্রিয়াটি নিম্নলিখিত ধাপগুলি অন্তর্ভুক্ত করে:

১. চাকরির প্রস্তাব:

  • বেলজিয়ামের কোনো কোম্পানি থেকে একটি বৈধ চাকরির প্রস্তাব পাওয়া আবেদন প্রক্রিয়ার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
  • এই প্রস্তাবপত্রে আপনার চাকরির বিবরণ, বেতন এবং অন্যান্য শর্তাবলী স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।

২. ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন:

  • সাধারণত, আপনার নিয়োগকর্তা আপনার পক্ষ থেকে আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের কাছে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করবেন।
  • কিছু ক্ষেত্রে, আপনাকে নিজেই ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে হতে পারে।

৩. ভিসার আবেদন:

  • ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার পর, আপনি আপনার দেশের বেলজিয়াম দূতাবাস বা কনস্যুলেটে কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
  • আপনাকে একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

৪. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

  • বৈধ পাসপোর্ট
  • বেলজিয়াম কোম্পানি থেকে চাকরির প্রস্তাবপত্র
  • ওয়ার্ক পারমিট (যদি প্রযোজ্য হয়)
  • যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার সনদপত্র
  • স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ
  • আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ
  • অপরাধমুক্ত থাকার প্রমাণপত্র
  • অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (ভিসার ধরনের উপর নির্ভর করে)

৫. সাক্ষাৎকার:

  • কিছু ক্ষেত্রে, আপনাকে দূতাবাস বা কনস্যুলেটে একটি সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করতে হতে পারে।

৬. ভিসা প্রদান:

  • আপনার আবেদন এবং কাগজপত্র যাচাই করার পর, কর্তৃপক্ষ আপনার ভিসা আবেদন অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান করবে।
  • অনুমোদনের ক্ষেত্রে, আপনার পাসপোর্টে ভিসা স্ট্যাম্প করা হবে।

৭. বেলজিয়ামে আগমন:

  • ভিসা পাওয়ার পর, আপনি বেলজিয়ামে আসতে পারেন এবং আপনার নিয়োগকর্তার সাথে কাজ শুরু করতে পারেন।
  • আপনাকে অবশ্যই বেলজিয়ামের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আপনার আগমন এবং ঠিকানা নিবন্ধন করতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ টিপস:

  • আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করার আগে ভালোভাবে গবেষণা করুন এবং সকল প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জেনে নিন।
  • সময়মতো আবেদন করুন, কারণ প্রক্রিয়াটিতে অনেক সময় লাগতে পারে।
  • সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে এবং সম্পূর্ণভাবে জমা দিন।
  • আপনার নিয়োগকর্তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন এবং প্রয়োজনে তাদের সহায়তা নিন।
  • বেলজিয়াম দূতাবাস বা কনস্যুলেটের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত নির্দেশাবলী সাবধানে অনুসরণ করুন।

বেলজিয়ামে পৌঁছানোর পর করণীয়

বেলজিয়ামে পৌঁছানোর পর আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে হবে যাতে আপনি দেশে বৈধভাবে বসবাস এবং কাজ করতে পারেন। এখানে কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ রয়েছে:

১. নিবন্ধন:

  • আগমন নিবন্ধন: বেলজিয়ামে পৌঁছানোর ৮ দিনের মধ্যে আপনাকে আপনার স্থানীয় পৌরসভায় (commune/gemeente) নিবন্ধন করতে হবে। এটি আপনার আবাসন ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে।
  • ঠিকানা নিবন্ধন: আপনার বেলজিয়ামের ঠিকানা নিশ্চিত হওয়ার পর, আপনাকে আপনার স্থানীয় পৌরসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে আপনার ঠিকানা নিবন্ধন করতে হবে।

২. আবাসন কার্ড (Residence Card):

  • আবেদন: আপনার নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর, আপনাকে একটি আবাসন কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে। এটি আপনাকে বেলজিয়ামে বৈধভাবে বসবাসের প্রমাণ দেবে।
  • প্রক্রিয়া: আপনার স্থানীয় পৌরসভায় আবেদন করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

৩. অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ:

  • ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা: বেলজিয়ামে আপনার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন হবে যাতে আপনি আপনার বেতন পেতে এবং অন্যান্য আর্থিক লেনদেন করতে পারেন।
  • স্বাস্থ্য বীমা: নিশ্চিত করুন যে আপনার স্বাস্থ্য বীমা বেলজিয়ামে বৈধ এবং এটি আপনার চিকিৎসার খরচ কভার করে।
  • ট্যাক্স নিবন্ধন: আপনাকে বেলজিয়ামের ট্যাক্স কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধন করতে হবে এবং আপনার আয়ের উপর কর দিতে হবে।
  • সামাজিক নিরাপত্তা: আপনার নিয়োগকর্তা আপনাকে বেলজিয়ামের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নিবন্ধন করবেন, যা আপনাকে বেকারত্ব সুবিধা, অসুস্থতা সুবিধা এবং পেনশনের মতো সুবিধা প্রদান করবে।

প্রয়োজনীয় সময়সীমা

বেলজিয়াম কাজের ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া প্রায় ৬-১২ সপ্তাহ সময় নেয়। তাই ভিসার আবেদন যথাসময়ে জমা দেওয়া জরুরি।

অতিরিক্ত টিপস:

  • ভাষা শেখা: যদিও অনেকে ইংরেজি বলেন, স্থানীয় ভাষা (ডাচ, ফরাসি বা জার্মান) শেখা আপনাকে স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এবং আপনার সামাজিক ও পেশাগত জীবনকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করবে।
  • স্থানীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানুন: বেলজিয়ামের সংস্কৃতি এবং রীতিনীতি সম্পর্কে জানুন, এটি আপনাকে দেশে আরামদায়কভাবে বসবাস করতে সাহায্য করবে।
  • নেটওয়ার্ক তৈরি করুন: অন্যান্য প্রবাসী এবং স্থানীয়দের সাথে সংযোগ স্থাপন করুন, এটি আপনাকে নতুন পরিবেশে সামাজিকভাবে একত্রিত হতে সাহায্য করবে।

বেলজিয়ামে পৌঁছানোর পর এই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি সম্পন্ন করে, আপনি সহজেই দেশে বসবাস শুরু করতে এবং আপনার নতুন কর্মজীবন উপভোগ করতে পারেন।

বেলজিয়ামে কাজ করার সুবিধা ও অসুবিধা

বেলজিয়াম একটি উন্নত দেশ এবং এখানে কাজ করার সুযোগ অনেকেই পছন্দ করেন। তবে প্রতিটি দেশের মতো বেলজিয়ামে কাজ করারও কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। এখানে বেলজিয়ামে কাজ করার প্রধান সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হলো:

বেলজিয়ামে কাজ করার সুবিধা

  1. উন্নত জীবনমান: বেলজিয়াম ইউরোপের অন্যতম উন্নত দেশ। এখানে জীবনমান খুবই ভালো, যা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবহন, ও সামাজিক সেবা সহ সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
  2. উচ্চ বেতন: বেলজিয়ামে বেশিরভাগ চাকরিতে ভালো বেতন পাওয়া যায়, বিশেষ করে যদি আপনি উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন পেশাজীবী হন। ব্লু কার্ডের অধীনে চাকরির ক্ষেত্রে বেতন অনেক ভালো হয়।
  3. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা: বেলজিয়ামে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা উন্নতমানের এবং অধিকাংশ সময় বিনামূল্যে বা অনেক কম খরচে পাওয়া যায়।
  4. সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা: বেলজিয়ামের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর। কর্মচারীদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা যেমন পেনশন, স্বাস্থ্যবীমা, এবং বেকারত্ব সহায়তা প্রাপ্তি সহজতর হয়।
  5. মাল্টিকালচারাল পরিবেশ: বেলজিয়াম একটি মাল্টিকালচারাল দেশ যেখানে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সাথে কাজ করার সুযোগ থাকে। ফলে আপনি আন্তর্জাতিক কর্ম পরিবেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন।
  6. ভালো কাজের সুযোগ: ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেলজিয়ামে আইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিনান্স, এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো খাতে ভালো কাজের সুযোগ রয়েছে।

বেলজিয়ামে কাজ করার অসুবিধা

  1. ভাষাগত চ্যালেঞ্জ: বেলজিয়ামের সরকারি ভাষা তিনটি: ডাচ, ফ্রেঞ্চ, এবং জার্মান। যদি আপনি এই ভাষাগুলোর কোনো একটি না জানেন, তাহলে কাজের ক্ষেত্রের সাথে খাপ খাওয়ানো কঠিন হতে পারে।
  2. উচ্চ করহার: বেলজিয়ামে আয়করের হার বেশ উচ্চ, যা প্রায় ৫০% পর্যন্ত হতে পারে। ফলে আপনার আয়ের বড় একটি অংশ কর হিসেবে কেটে যায়।
  3. জীবনযাত্রার উচ্চ খরচ: বেলজিয়ামের বড় শহরগুলোতে যেমন ব্রাসেলস, অ্যান্টওয়ার্প ইত্যাদিতে জীবনযাত্রার খরচ অনেক বেশি। বাসস্থান, খাবার, এবং পরিবহনের খরচ অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বেশি হতে পারে।
  4. বিচ্ছিন্ন আবহাওয়া: বেলজিয়ামের আবহাওয়া অনেক সময় শীতল এবং বৃষ্টিপূর্ণ থাকে, যা অনেকের জন্য মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। দীর্ঘ শীতকাল অনেকের পছন্দের না হতে পারে।
  5. কঠোর প্রতিযোগিতা: বেলজিয়ামের শ্রমবাজার খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ, বিশেষ করে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন পেশাগুলির ক্ষেত্রে। যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকলে এখানে ভালো চাকরি পাওয়া কঠিন হতে পারে।
  6. ব্রাসেলসের যানজট: বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস বেশিরভাগ সময় যানজটপূর্ণ থাকে। যারা সেখানে কাজ করেন, তাদের জন্য এটি প্রতিদিনের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

বেলজিয়ামে কাজ করার সুবিধা ও অসুবিধা দুটিই রয়েছে। উন্নত জীবনমান, ভালো বেতন, এবং সামাজিক সুরক্ষার মতো সুবিধাগুলি আকর্ষণীয় হলেও, ভাষাগত চ্যালেঞ্জ ও উচ্চ করহার কিছু অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই বেলজিয়ামে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে এই সুবিধা-অসুবিধাগুলি বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।

আরো জানুন: স্পেন কাজের ভিসা ও বেতন সম্পর্কে

বেলজিয়াম কাজের বেতন কত

বেলজিয়ামে বেতন সাধারণত মাসিক ভিত্তিতে প্রদান করা হয় এবং এটি আপনার পেশা, অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা এবং অবস্থানের উপর নির্ভর করে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে যা আপনাকে বেলজিয়ামের বেতন সম্পর্কে একটি ধারণা দিতে পারে:

  • ন্যূনতম মজুরি: বেলজিয়ামে একটি জাতীয় ন্যূনতম মজুরি রয়েছে যা বেশিরভাগ কর্মচারীর জন্য প্রযোজ্য। 2024 সালের মে মাস থেকে, ন্যূনতম মজুরি মাসিক €2,070.48

  • গড় বেতন: বেলজিয়ামের গড় মাসিক বেতন প্রায় €3,500। তবে, এটি আপনার পেশা এবং অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আইটি এবং প্রকৌশলের মতো ক্ষেত্রগুলিতে গড় বেতন অনেক বেশি হতে পারে।

  • কর এবং সামাজিক নিরাপত্তা: বেলজিয়ামে আয়কর এবং সামাজিক নিরাপত্তা অবদান উভয়ই তুলনামূলকভাবে বেশি। আপনার মোট বেতন থেকে এই অবদানগুলি কেটে নেওয়া হবে, তাই আপনার নেট বেতন (টেক-হোম বেতন) আপনার মোট বেতন থেকে কম হবে।

  • অন্যান্য সুবিধা: অনেক নিয়োগকর্তা অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে, যেমন খাবার ভাতা, পরিবহন ভাতা, বোনাস এবং স্বাস্থ্য বীমা। এই সুবিধাগুলি আপনার মোট ক্ষতিপূরণ প্যাকেজে যোগ করতে পারে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

  • বেলজিয়ামে বেতন সাধারণত 13.9 মাসিক কিস্তিতে প্রদান করা হয়, যার মধ্যে একটি “13 তম মাস” বোনাস অন্তর্ভুক্ত থাকে যা সাধারণত ডিসেম্বরে প্রদান করা হয়।
  • আপনার নিয়োগকর্তার সাথে আপনার বেতন এবং সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।
  • আপনার চাকরির প্রস্তাব গ্রহণ করার আগে, আপনার নেট বেতন এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনা করে নিশ্চিত করুন যে আপনি বেলজিয়ামে আরামদায়ক জীবনযাপন করতে পারবেন।

উপসংহার

বেলজিয়ামে কাজ করার সুযোগ পেতে হলে যথাযথ নিয়ম মেনে কাজের ভিসার আবেদন করতে হবে। সঠিক নথি ও যোগ্যতা থাকলে আপনার জন্য বেলজিয়ামে কাজের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।

এই নিবন্ধে বেলজিয়ামের কাজের ভিসার প্রয়োজনীয় তথ্য ও নির্দেশিকা প্রদান করা হয়েছে, যা আপনাকে আপনার ভিসা প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে।

বেলজিয়াম কাজের ভিসা সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য কিছু কার্যকরী লিঙ্ক:

বিশেষ দ্রষ্টব্য: ওয়েবসাইট লিঙ্ক এবং তথ্য পরিবর্তনশীল।

Leave a Comment